বহুল আলোচিত 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন' এর বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং এটিকে ঘিরে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০২৪ (Digital Security Act 2024) বাংলাদেশে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত একটি আইন। এই আইনটি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে, এই আইনটি নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
অপরাধের সংজ্ঞা:
- অনলাইনে মিথ্যা তথ্য প্রচার।
- সাইবার বুলিং এবং হয়রানি।
- রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
- ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন।
শাস্তির ব্যবস্থা:
বিভিন্ন অপরাধের জন্য বিভিন্ন মাত্রার শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মিথ্যা তথ্য প্রচার বা সাইবার বুলিংয়ের জন্য জরিমানা এবং কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তল্লাশি করার ক্ষমতা প্রদান করে। এই ক্ষমতা অনেক সময় ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।
সমালোচনা ও বিতর্ক:
মিডিয়া ও সাংবাদিকদের উপর প্রভাব:
এই আইনের অধীনে অনেক সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করছে। সাংবাদিকদের মতে, এই আইনটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করছে এবং সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে।
স্বাধীন মতামত প্রকাশে বাধা:
আইনটির বিভিন্ন ধারা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করে এবং এটি ব্যবহার করে বিরোধী মতামত দমন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি দাবি করেছে যে, এই আইনটি ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনাকারীদের লক্ষ্য করে প্রণীত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF), ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এই আইনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি অবিলম্বে সংশোধন বা বাতিল করা উচিত।
সংশোধনের প্রস্তাবনা:
- আইনটির কয়েকটি ধারার সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায় এবং সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণের অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
- মানবাধিকার সংগঠনগুলি সরকারকে এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছে, যা আইনটির প্রয়োগ পর্যবেক্ষণ করবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০২৪ বাংলাদেশের ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এর বিভিন্ন ধারা ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এই আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।